"পেডিগ্রী- প্রজেনী- EPD" কাহিনী - First Mordern Bangla Agro Based Blog

Breaking

Friday, March 2, 2018

"পেডিগ্রী- প্রজেনী- EPD" কাহিনী

"পেডিগ্রী- প্রজেনী- EPD" কাহিনীঃ



সিমেনের মান ও বুলের তথ্য বুঝতে চাইলে ‘পেডিগ্রী’ ও ‘প্রজেনী’ শব্দ দুটির মানে আগে বুঝতে হবে। ‘পেডিগ্রী’ শব্দের অর্থ পূর্বপুরুষ- অর্থাৎ ষাঁড়ের বাবা-মা, দাদা-দাদী, নানা-নানী, বড় দাদা- বড় দাদী, বড় নানা-বড় নানী ইত্যাদির তথ্য সম্বলিত চার্ট বা EPD-ই (‘Expected Progeny Difference’) হল ষাঁড়ের পেডিগ্রীর তথ্য। আর ষাঁড়ের নিজের EPD হল তার প্রজেনীর তথ্য।
"প্রজেনী" শব্দের অর্থ হল সন্তানাদি। একটি ষাঁড়ের পেডিগ্রী বা পূর্বপুরুষ ভাল হলেই যে সে ভাল হবে এর কোন নিশ্চয়তা নেই। সৈয়দ বংশের পোলারাও কুলাঙ্গার হয়। তো, কোন ষাঁড় তার ভাল পেডিগ্রীর ভাল ভাল গুন যদি তার কন্যাদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে না পারে – তবে সে অযোগ্য। ষাঁড়ের এই যোগ্যতার বিচার অর্থাৎ কন্যারা ভাল গুন পাবে কিনা তা বোঝার রাস্তা দুইটি –
একঃ প্রজেনী টেস্টঃ
একটি সম্ভাবনাময় বুলের সিমেন সমমানের অনেকগুলো গাভীতে দিতে হবে। তাতে যে বকনা বাচ্চা আসবে তা যখন দুধ দিবে তখন এই বাচ্চাদের গুনাগুনের পরিসংখান নিয়ে দেখতে হবে যে, বুলটি তার কন্যাদের মধ্যে জেনেটিক গুনাগুন কতটা ট্রান্সমিট করতে পারল।
বুলটির এই মূল্যায়ন ব্রিডিং ভ্যালু, PTA (Predicted Transmitting Ability), REL (Reliability) ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে করা হয়। জটিল আলোচনায় গেলাম না- শুধু জেনে রাখুন প্রজেনী টেস্ট সারা পৃথিবীতে ব্রীডিং বুল মুল্যায়নের সবচেয়ে ভাল ও সর্বজন গ্রাহ্য উপায়।
অন্তত কয়েকশত বাচ্চার রেজাল্ট ভাল আসলেই কেবল বুলের সিমেন বাজারে ছাড়া হয়। সাথে প্রকাশ করা হয় EPD। আর পর্যাপ্ত বাচ্চার বৈশিষ্ট্য চমৎকার হলে বুলটিকে প্রূভেন ঘোষনা দেয়া হয়।
এইযে বাচ্চাদের গুনাগুন বিচার করে বুলকে স্বীকৃতি দেয়া হল- এরই নাম প্রজেনী টেস্ট।
প্রজেনী টেস্ট ছাড়া শুধুমাত্র পেডিগ্রি দেখে কোন বুলকে ব্রীডিং বুলের স্বীকৃতি দেয়া যায় না। এ জন্যই খামারের বুল ব্রীডিং বুল নয়। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আমাদের দেশে প্রজেনী টেস্ট ছাড়াই সিমেন বিক্রি চলছে। (সরকারের একটিমাত্র প্রজেক্ট ছাড়া। এই প্রজেক্টেও যে প্রক্রিয়াতে প্রূভেন বুল ঘোষণা দেয়া হচ্ছে তা আন্তর্জাতিক মানের নয়)।
দুইঃ জিনোমিক টেস্টঃ
প্রজেনী টেস্টের রেজাল্ট আসতে যেহেতু বেশ সময় লাগে তাই শর্টকাট হল জিনোমিক টেস্ট। অত্যাধুনিক জেনেটিক রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে ষাঁড়ের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের জীন পরীক্ষা করে বলে দেয়া যায় তার কন্যাদের মাঝে বৈশিষ্ট্য কতটুকু ট্রান্সমিট হবে- এটাই জিনোমিক টেস্ট। জিনোমিক টেস্টে কোন বুলের রেজাল্ট ভাল আসলে কম বয়সেই তার সিমেনগুলি বাজারে ছাড়া যায়। একই সাথে চলতে থাকে প্রজেনী টেস্ট। এই জিনোমিক টেস্টিং "ব্রীডিং বুল" ইন্ডাস্ট্রিকে এক ধাক্কায় অনেকদূর এগিয়ে দিয়েছে।
ভাই, পশ্চিমারা আধুনিক এসব প্রযুক্তি নিয়ে যে কতদূর এগিয়েছে- তা কল্পনাতীত। শুনলে, ঘাটাঘাটি করলে মনে হয় আমরা এখনো প্রস্তর যুগে বসে আছি।
জেমস ওয়াট-রা জলীয় বাষ্প দিয়ে বাষ্পীয় ইঞ্জিন তৈরী করে ডিজেল, পেট্রোল, ইলেক্ট্রিক হয়ে এখন হাইড্রোজেন ফুয়েল নিয়ে ব্যস্ত। আমরা আগেও জলীয় বাষ্প দিয়ে ভাপা পিঠা বানাতাম- এখনো বানাই। বরং অবনতি হইছে- বাসায় ভাপা পিঠা তৈরি হয়না- মোড়ের ধূলাবালিরটা কিনে খাই।
ভাই, এবার চিন্তা করুন- দেশে যেসব সিমেন আছে তার পেডিগ্রী প্রকাশ করা হয়না। এর কী কারন থাকতে পারে?? আপনার বাপ দাদার পরিচয় দিতে আপনার লজ্জা লাগলে আমরা কী ধরে নিব?? তবে কি দেশের সিমেনগুলো পিতৃপরিচয়হীন?? লজ্জার কথা!!!
অতএব, জোর দাবি জানাচ্ছিঃ (সরকারি-বেসরকারি সকলের কাছে)
১। দেশের সকল সিমেনের বংশপরিচয় (পেডিগ্রী) ওয়েবসাইট, ক্যাটালগ, লিফলেট বা নোটিশ বোর্ডে হলেও প্রকাশ করতে হবে। অন্তত পেডিগ্রীটা ভাল হলে বুলটি ভাল হবার একটা সম্ভাবনা থাকে।
১০০% বুল হলে সেটি কোন দেশের, কোন কোম্পানীর তা উল্লেখ সহ পেডিগ্রী দিতে হবে (NAAB Code সহ) যেন আমরা ওয়েবসাইটে যাচাই করতে পারি।
১০০% এর কম হলে (৫০%, ৭৫%, ৮৭.৫% ইত্যাদি) যে ১০০% বুল হতে এরা আসলো সে ১০০% বুলেরও সমস্ত তথ্য দিতে হবে। একই সাথে দিতে হবে বাকী পার্সেন্টেজ জেবুর পরিচয় (যেমন ৭৫% সিমেনে ৭৫% হলস্টিন ও ২৫% জেবু থাকে)। অর্থাৎ আমাদেরকে জানাতে হবে- ৭৫% সিমেনটিতে যে ২৫% জেবু আছে সেটি কি দেশীয়, না শাহীওয়াল, না গীর?? এবং এদের উৎপাদনের রেকর্ড কি?
২। পেডিগ্রী দিয়েই দায়িত্ব শেষ- এইটা চলবে না। প্রত্যেকটি সিমেনের প্রজেনী টেস্টিং চালিয়ে যেতে হবে। এবং প্রতি ৩ মাস/৬মাস পরপর তা আমাদের জানাতে হবে EPD আকারে। (পশ্চিমা দেশের সকল ব্রীডিং বুলের EPD প্রতি মাসে আপডেট করা হয়)
৩। সরকারকে কে বলছে ৩০/৩৫ টাকায় সিমেন দিতে? আমরা কি ফকিন্নি?? আমরা যারা হলস্টিন ক্রস পালি- সবাই কমপক্ষে লাখ টাকার কারবারি। আমাদেরকে ফকির-মিসকিনের মত মনে করা বন্ধ করুন। সস্তার তিন অবস্থা। সস্তায় দিতে হবে বলে মানহীন, বংশপরিচয়হীন সিমেন দিয়ে যাবেন- বেসরকারি উদ্যোক্তারা ভাল সিমেন আনতে চাইলে উদ্ভট ব্রিডিং পলিসির দোহাই দিয়ে বাধা দিবেন- এইটা কি মগের মুল্লুক নাকি??
আর আপনারা সস্তায় দিলেও তো এ.আই. কর্মীরা তা সস্তা রাখে না।
৪। সরকারি দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তিদের প্রতিঃ-
স্যার, আপনারা কিন্তু জনগনের সেবক, প্রভু নন। যে ট্যাক্সপেয়ারদের (করদাতা-মানে আমরা সবাই) ট্যাক্সের পয়সায় আপনাদের বেতন-ভাতা হয়- তাদের প্রতি একটা পবিত্র দায়িত্ব আছে কিন্তু। আর ভাল সিমেন, ক্রস-ব্রীডিং, পেডিগ্রী, EPD, প্রজেনী- এসব পড়াশোনা করেই তো আপনারা বড়কর্তা হয়েছেন। তাহলে এবার এসব জ্ঞানের নজির রাখুন। সরকারি বাজেট ঘাটতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার সমস্যা থাকলে বেসরকারি ও ব্যক্তিপর্যায়ের উদ্যোক্তাদের অন্তত অনুমতি দিন স্বাধীনভাবে সিমেন ও বুল নিয়ে কাজ করার। বিদেশী ভাল সিমেন আমদানীর অনুমতি দিন আর আমদানী প্রক্রিয়া সহজ করুন। আপনারা আগামী এক হাজার বছরেও USA-Canada এর মত মানসম্পন্ন ১০০% সিমেন ও ব্রাজিলের মত ৬২.৫% ও ৭৫% সিমেন তৈরি করতে পারবেন না। তাহলে এগুলো আমদানির উপর বিধিনিষেধ আরোপের মানে কি?? এই গোড়ামির মানে কি?? বিজ্ঞানী হয়ে মধ্যযুগীয় পাদ্রীদের মত আচরণ কেন??
দয়া করে আমদানির অনুমতি দিন- ডেইরী শিল্পটাকে বাঁচান। এভাবে তো চলতে পারে না।
★★★★★
(আমার লেখার রূঢ়তায় কেউ কষ্ট পেলে ক্ষমা চাইছি। এদেশে সিমেনের মান প্রসঙ্গে কথা উঠলে আমি মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারিনা- প্রেসারটা কিঞ্চিত বেড়ে যায়। জীবনানন্দ দাশের “অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ, যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা”- এ কবিতাটির কথা মনে পরে যায়।)

No comments:

Post a Comment